নিউইয়র্কে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতারের স্থপতি কবি বেলাল মোহাম্মদ: স্বাধীনতার ঘোষনা তিনিই দিতে পারেন যিনি অথোরাইজড, অন্য কেউ নয়
বাংলা প্রেস (নিউইয়র্ক) : উনিশ’শ একাত্তরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি ও বিশিষ্ট কবি বেলাল মোহাম্মদ বলেছেন,ইচ্ছে করে যে কেউ স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে পারেন না,তিনিই স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে পারেন যিনি অথোরাইজড। একই কথা আমাকে হাজার বার বলতে হয়েছে। আমি আবারও বলছি,বাংলাদেশের স্মরনকালের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া আর কেউই স্বাধীনতার ঘোষনার অধিকার পায়নি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ড কাউন্সিল আয়োজিত গত রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত ৪০তম মহান স্বাধীনতার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি একথা নিউইয়র্কের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য কবি বেলাল মোহাম্মদ আরও বলেন,আমার কাছে ভাল লাগছে এ জন্য যে, ৪০ বছর পর হলেও অন্য এক দেশে আমার মুক্তিযোদ্ধা সহযোদ্ধাদের সাথে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারছি। ১৯৭১ সালে আপনারা যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের সাথে আমাদের একটু ব্যবধান রয়েছে। আমরা কেউ বন্দুক হাতে যুদ্ধ করিনি।
কেউ যুদ্ধ করেছে বন্দুক নিয়ে,কেউ স্লোগান বা গান নিয়ে। আমরা স্লোগান আর গানের দলে। দু’টোই গান। এই মিলটা আমরা করাতে পারি। এছাড়া উদ্দেশ্য একই ছিল,স্বাধীনতা অর্জন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বলেন,একজন মুক্তিযোদ্ধার লক্ষ্য কি? মুক্তিযোদ্ধার লক্ষ্য হল দেশের স্বাধীনতা পাওয়া। স্বাধীনতা পাওয়া মাত্রই স্বাধীন দেশের মুক্তিযোদ্ধারা মনে করবে আমি একটি দেশে চলে এসেছি। তারপর যদি বিবাদ থাকে তাহলে হতাশা ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না। আমাদের অনেক চরিত্র হনন হয়েছে।
স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্ক নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি ও বিশিষ্ট কবি বেলাল মোহাম্মদ আরও বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের নিত্য দিনের খোরাক স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্কের জন্য আমিই একমাত্র দায়ী। জিয়াউর রহমানকে রেডিও স্টেশনে আনার জন্যও আমি দায়ী। জিয়াউর রহমানকে বেতার ঘোষক হিসেবে রোল দেয়ার জন্য আমি দায়ী। কারন ঐ সময় আমি ছিলাম উপস্থাপক। আমি জিয়াকে বলেছি,আমরা তো এখানে মাইনর,আপনি মেজর হিসেবে কিছু বলবেন। সেটা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নয়, ২৭ মার্চ। আমরা জানি ঐ সময়ে মার্চ মাসটি ছিল অত্যন্ত উতপ্ত। সমগ্র জাতি,বাঙ্গালী জাতি তাদের জাতিসত্ত্বার পুনঃবিকাশের জন্য ছিল চরম মুহুর্ত। সে সময়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের যে উদ্ভব ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই হয়েছিল তা চরমভাবে বিকশিত ও চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সমস্ত জাতি এক ব্যক্তিত্বের অধীনে চলে গিয়েছিল। তিনি হলেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন আমাদের একটাই স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। গান গেয়েছি ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম,শেখ মুজিবুর রহমান’। তিনি স্বাধীনতা ঘোষনা বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন,স্বাধীনতার ঘোষনা কিভাবে হয়? একটা ট্রন্সমিশন যদি খেজুর গাছের সাথে লটকে দেয়া হয় আর সেখানে একেক জন গিয়ে যদি বলি,ভাইসব আমি আজ থেকে রাষ্টপতি। তাহলে কি স্বাধীনতার ঘোষনা হবে? স্বাধীনতার ঘোষনা তিনিই করতে পারবেন যিনি অথোরাইজড। এই কথাটিই সেই একাত্তর সাল থেকেই বলে আসছি। বহু স্থানে বহুবার বলেছি,কিন্তু আমার বলাতেও কোন কাজ হয়না।
যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুন্নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন মুলক বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আ.লীগ নেতা ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আ.লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, আ.লীগ নেতা নিজাম চৌধুরী,কামাল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা ড.আব্দুল বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সিদ্দিক, মুক্তিযোদ্ধা নজমুল ইসলাম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহা.আজাদ,ড. মোহা.তাজুল ইসলাম,বেলাল বেগ,কাজী মনিরুল ইসলাম,ফাহিম রেজা নুর, মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রিচি,জাকারিয়া চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আনোয়ার বাবলু ও টিটো রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা ড.আব্দুল বাতেন, ডা.মাসুদুল হাসান ও মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল আনসারী। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সমকালীন সঙ্গীত শিল্পী কৌশলী ইমা।